চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নিয়ে যা ঘটল

May 1, 2025 - 09:26
 0  36
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন নিয়ে যা ঘটল

চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী — ইসকনের সাবেক নেতা — রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জামিন পাওয়ার পর, আদালতের নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অতিক্রম করলেন। একদিকে তাঁর জামিনের আদেশ, অন্যদিকে তা স্থগিত হওয়ার ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। এই মামলা নিয়ে বিতর্ক, হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের অবস্থান, এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা — সবই এক অনন্য নজির হয়ে রইল।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ যখন আদালতের নজরে আসে, তখন তাঁর জামিন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে হাইকোর্ট ৩০ এপ্রিল তাঁকে জামিন দেয়। কিন্তু বিকেলেই চেম্বার আদালত সেই আদেশ স্থগিত করেন। পরে সন্ধ্যায় আবার সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এই অল্প সময়ের মধ্যে একাধিক মোড় ঘোচানো হয় মামলার গতিপথে।

চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক এ সিদ্ধান্ত দেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, আগামী রোববার আবারো শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। অর্থাৎ, চিন্ময়ের আইনজীবীদের জন্য আবার প্রস্তুতির সময় থাকছে, এবং রাষ্ট্রপক্ষও নতুনভাবে যুক্তি দিতে পারবে।

এর আগে, গত ২৩ এপ্রিল হাইকোর্টের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি মুলতবি করে। তখন ৩০ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য হয়। অবশেষে, সেই দিনে হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করে, কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে শুরু হয় নাটকীয় মোড়।

২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর, বিএনপির নেতা ফিরোজ খান কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। এতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার কিছুদিন পর, ফিরোজ খান নিজেই বিএনপি থেকে অব্যাহতি পান। চিন্ময় ও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন।

মামলার মূল প্রেক্ষাপট ছিল একটি রাজনৈতিক বক্তব্য ও তার প্রভাব, যা রাষ্ট্রবিরোধী বিবেচিত হয়। এই অভিযোগে চিন্ময়কে চট্টগ্রাম আদালতে তোলা হলে, গত ২ জানুয়ারি তাঁর জামিন আবেদন খারিজ করা হয়। এরপর হাইকোর্টে অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদন জানানো হয় ১২ জানুয়ারি।

৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চায়, কেন চিন্ময়কে জামিন দেওয়া হবে না। এই রুলের শুনানির তারিখ ধার্য হয় ১৯ মার্চ। এরপর একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর অবশেষে ৩০ এপ্রিল বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে এবং জামিন আদেশ আসে।

এই মামলার আরেকটি আলোচিত দিক হলো ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষ ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা। চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয় এবং পরদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ৩ ডিসেম্বরের শুনানিতে তাঁর পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় ২ জানুয়ারি নতুন দিন ধার্য হয়।

এই মামলা এবং শুনানিগুলো রাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থার বাস্তবচিত্র ফুটিয়ে তোলে। রাজনৈতিক প্রভাব, বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, এবং আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি — সব মিলিয়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আদেশের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হওয়া, তাঁকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে। তবে মামলা চলমান থাকায় তাঁর ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে তাঁর মুক্তির পথ কতটা দীর্ঘ হবে।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা, বিশেষ করে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো স্পর্শকাতর মামলায়, প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলায় চিন্ময়ের আইনজীবীরা অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে আদালতে শক্তিশালী অবস্থান নেন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল বাসেত ও ফরিদ উদ্দিন খান যুক্তি তুলে ধরেন।

এই মামলার ভবিষ্যৎ বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে বা তা প্রতিষ্ঠিত করতেও পারে। রাষ্ট্র ও নাগরিকের অধিকার রক্ষার ভারসাম্য বজায় রাখতে এই ধরনের মামলার বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যা এই মামলার সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়। চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুর হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় সংঘর্ষের মধ্যে তাঁকে হত্যা করা হয়। এরপর আদালতের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায় এবং বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়।

চিন্ময়ের মামলা ও জামিন প্রক্রিয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে এই মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে দেখেন, আবার কেউ কেউ আইনের শাসনের প্রতিফলন হিসেবেও ব্যাখ্যা করেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিন্ময়ের জামিন আদেশকে কেন্দ্র করে জনমতের বিভাজন স্পষ্ট।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow